বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে খেলাকে বিভিন্নভাবে শ্রেণিকরণ করা হয়। যেমন-
অঙ্গ সঞ্চালনমূলক খেলা- শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঞ্চালনের মাধ্যমে শিশুরা যে খেলাগুলো খেলে থাকে তাই
অঙ্গ সঞ্চালনমূলক খেলা। যেমন- দৌড়াদৌড়ি, বল খেলা, সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা, গাছে চড়া ইত্যাদি। জন্মের পর প্রথম দুই বছর শিশু হাত-পা নাড়াচাড়া করে, আঙুল মুখে দিয়ে আনন্দ পায়। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে অঙ্গ সঞ্চালনে পরিবর্তন ঘটে। একটু বড় হলে হামাগুড়ি দেওয়া, দোলা, দৌড়ঝাঁপ, বেয়ে ওঠা ইত্যাদি অঙ্গ সঞ্চালনমূলক খেলা শিশু করে থাকে। সাধারণত ৫ বছরের পর থেকে শিশুরা এ ধরনের খেলায় দক্ষতার পরিচয় দেয়। ৭ ও ৮ বছর বয়সে শিশুরা দলবদ্ধ হয়ে অঙ্গ সঞ্চালনমূলক খেলা করে থাকে। যেমন- ফুটবল, বৌছি, গোল্লাছুট, দাঁড়িয়াবান্ধা ইত্যাদি।
আবিষ্কারমূলক খেলা- অনেক সময় শিশু খেলনাকে দুমড়ে মুচড়ে ভেঙে খেলনার গঠন রহস্য আবিষ্কার ,করতে চেষ্টা করে। এতে খেলনাটি ভেঙে যায় ঠিকই কিন্তু খেলনার ভেতরে যন্ত্রপাতি দেখে শিশু আনন্দ পায়। এ থেকে শিশু বস্তুর আকার আকৃতি, কীভাবে এগুলো তৈরি হয়েছে, কীভাবেই বা কাজ করে ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে ধারণা লাভ করে।
গঠনমূলক খেলা- শিশু যখন তার নিজের ধারণা এবং অনুভূতি দিয়ে কোনো কিছু তৈরি করে, তখন সেটা গঠনমূলক খেলা হয়। সাধারণত ৩ বছর বয়সের পর থেকে শিশুর মধ্যে গঠনমূলক খেলার প্রতি ঝোঁক দেখা যায়। যেমন- কাগজ দিয়ে প্লেন ও নৌকা তৈরি, বালি, কাদামাটি, আটার মন্ড ও ব্লক দিয়ে বাড়ি, সেতু ও নানা আকৃতির জিনিস তৈরি করে শিশু আনন্দ পায়। এতে শিশুর চিন্তাশক্তির বিকাশ ঘটে। শিশুরা ছবি আঁকা ও রং করার মাধ্যমে সহজেই নিজের ধারণা ও অনুভূতি প্রকাশ করতে পারে।
কাল্পনিক বা নাটকীয় খেলা- সাধারণত ২ ও ৩ বছর বয়সের শিশুরা বাস্তব জীবনের অনুকরণে অভিনয় করে খেলে। যেমন- শিশু মা সেজে খেলে, ডাক্তার ও রোগীর ভূমিকায় অভিনয় করে, গাড়িচালক, ফেরিওয়ালা, পাইলট ইত্যাদি চরিত্র অনুকরণ করে খেলে। এই খেলা শিশুর কল্পনাশক্তি বৃদ্ধি করে, সমাজে কার কী ভূমিকা বা দায়িত্ব সে সম্পর্কে ধারণা লাভ করে।
দর্শন ও শ্রবণ-ইন্দ্রিয় ব্যবহার করে আনন্দ লাভ
অনেক সময় শিশুরা নিজে অংশগ্রহণ না করে অন্যের খেলা দেখেও আনন্দ পায়। টিভি দেখা, গল্প শোনা ইত্যাদিও এক ধরনের খেলা, যা থেকে শিশুরা আনন্দ লাভ করে। এতে ভাষার বিকাশ হয়, চিন্তা ও কল্পনাশক্তির বিকাশ ঘটে এবং সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পায়।
স্থানভেদে খেলাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়।
১) বহিরাঙ্গন খেলা (Outdoor Games) ও
২) অভ্যন্তরীণ খেলা (Indoor Games)
১) বহিরাঙ্গন খেলা- যে খেলা গৃহের বাইরে খোলা মাঠ বা জায়গায় খেলা হয় তাকে বহিরাঙ্গন খেলা বলে। যেমন- ফুটবল, কাবাডি, ক্রিকেট, গোল্লাছুট, কানামাছি ইত্যাদি। এ ধরনের খেলায় অঙ্গ সঞ্চালন হয় যা শারীরিক সুস্থতার জন্য প্রয়োজন।
২) অভ্যন্তরীণ খেলা গৃহ পরিবেশ অথবা আবদ্ধ স্থানে অনুষ্ঠানযোগ্য খেলাকে অভ্যন্তরীণ খেলা বলে। যেমন- দাবা, বাগাডুলি, ব্লক দিয়ে খেলা, ছবি আঁকা ইত্যাদি। এ ধরনের খেলায় বুদ্ধিমত্তা ও সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটে।
Read more